Friday 29 March 2013

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষ, নিহত ৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আসামি ধরতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের হামলার মুখে পড়েছে পুলিশ। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
শুক্রবার ভোর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার গোপালনগরে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে হতাহতের প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় জোট।
নিহতরা হলেন- ওমরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে ওয়ালিউল্লাহ (১৮), গোপালনগর গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান মতি (৪৫) এবং বাবুপুর গ্রামের মোহাম্মদ বদুর ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫)।
এদের মধ্যে ওয়ালিউল্লাহ ও রবিউল ঘটনাস্থলে এবং মতিউর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ মহা পরিদর্শক মীর শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা আসামি ধরতে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা হলে ১৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জানমাল রক্ষায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়।”
সংঘর্ষের সময় তিনজন নিহত হওয়ার ‘খবর শুনলেও’ পুলিশ কোনো লাশ বা অভিযোগ পায়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।  
তিনি বলেন, র‌্যাব ও বিজিবিও পুলিশকে এই অভিযানে সহযোগিতা করে। এ সময় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শরৎনগর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও নিহত ওয়ালিউল্লাহর চাচা আব্দুল মালেক (৫০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে এলাকায় পুলিশ আসে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ সময় পুলিশের গুলিতে তার ভাতিজাসহ তিন জন নিহত হয় বলে আব্দুল মালেক জানান।
তিনি বলেন, “ওয়ালিউল্লাহ শরৎনগর মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জেলা প্রতিনিধি জানান, নিহত তিন জনের লাশ গোপালনগর, বাবুপুর ও ওমরপুর গ্রামে তাদের বাড়িতেই রাখা হয়েছে।
সংঘর্ষে আরো অন্তত ২০-২৫ জন আহত হন বলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের মামলার আসামি ধরতে রাত ৩টার দিকে শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে যায় পুলিশ। বিষয়টি টের পেয়ে জামায়াত-শিবিরের লোকজন পটকা ফুটিয়ে গ্রামে পুলিশ আসার খবর জানান দেয়।
পটকার শব্দ শুনে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন গোপালনগরে জড়ো হয়ে পুলিশকে ঘিরে ফেলে। এলাকার একটি বড় অংশে আমবাগান থাকায় লোকজন সেখান থেকেই পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি যায়। ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে গোপালনগর গ্রামের লোকজন সাংবাদিকদের জানান।
পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি গোপালনগরেই অবস্থান করছেন। এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর জামায়াত-শিবিরকর্মীরা সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ–সোনা মসজিদ সড়কের কয়েকটি স্থানে কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ তৈরি করে এবং যান চলাচলে বাধা দেয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলার সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম ডালিম।
হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় জোট।